কর্তৃত্বময়ী ব্যক্তিত্বের মহিলা ছিলেন বাসন্তী কর

2 - মিনিট |

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শ্রদ্ধেয় বাসন্তী কর এখন আর নেই

বিশ্বদীপ গুপ্ত

আমাদের প্রত্যেকের অত্যন্ত প্রিয় সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বাসন্তী কর এখন আর নেই। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি ৯৭ বছর বয়সে আমাদের সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে পারাপারে চলে গেছে ন। তার মৃত্যুতে আমরা অত্যন্ত শোকাহত। তিনি বাসন্তীদি নামে বেশি পরিচিত ছিলেন। তার আত্মীয়-স্বজন গুণমুগ্দ্ধরা তাকে এই নামেই ডাকতেন। তিনি ছিলেন সবার অত্যন্ত প্রিয়। তার ব্যক্তিত্ব ছিল আকর্ষণীয় ও বহুমুখি। ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ এবং সংস্কৃতিমনস্ক। শিলং পট্টি হায়ার সেকেন্ডারী বালিকা বিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন।সেই সময়টা ছিল পঞ্চাশের দশক। এরপর চলে যান ধর্মনগর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে। ১৯৬৭ সালে থেকে অবসর গ্রহণ পর্যন্ত এই স্কুলে ছিলেন।

অবসর গ্রহণের পর তিনি কলকাতায় নবদর্শ সোসাইটিতে পাকাপাকিভাবে বসবাস করতে শুরু করেন ‌। এখানে নিজেকে উৎসর্গ করেন সমাজসেবা ও আধ্যাত্মিক কাজকর্মের উপর। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এভাবে মানুষের সঙ্গে থেকেছেন। সমাজের সঙ্গে থেকেছেন। বিভিন্ন সামাজিক ও আধ্যাত্মিক কার্য কলাপের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

আমি ছিলাম তার বোনপো। আমাকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। আমি নিজেও তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার সম্পর্কে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ছিলাম। কখন তার কি হয়, এসব নানা দুশ্চিন্তায়। তার এই মৃত্যু আমাকে অত্যন্ত পীড়া দিয়েছে। তার শেষকৃত্য হয়েছে নবদর্শ সোসাইটিতে। এই সোসাইটিতে এখন একটা শূন্যতা বিরাজ করছে। যখন আমরা নিমন্ত্রণ করতে যাই তখন সেখানকার বাসিন্দারা জানালেন, অত্যন্ত অতিথি বৎসল ছিলেন তিনি।

বাড়িতে কেউ গেলে কাউকে না খাইয়ে ছাড়তেন না। সোসাইটির বাসিন্দারাই জানালেন এ কথা। অতিথিদের সেরা সেবা দিতে চাইছেন ।এমনকি যখন বার্ধক্য ,শরীর চলছে না তখনও তিনি সেই সেবা দিতেন। ধর্মীয় রীতিনীতি মানতে তিনি পিছপা হতেন না ‌। তার মৃত্যুতে তার যে পরিচর্যা কারীরাও কেঁদে ওঠে ন। ওদের নিজের মেয়ের মত দেখতেন।

একটা অভিভাবক সুলভ নিয়ন্ত্রণ ছিল সবার উপরে। তার ভাই বোন বোনপো সবার উপর তার একটা কর্তৃত্ব ছিল। তার আদেশ সবাই এক বাক্যে মেনেও নিতেন। একটা সময় আমরা ভগবান থেকেও তাকে বেশি ভয় করতাম। যদিও আমি তার প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রনে কোন সময় ছিলাম না। আসলে তাকে কথা বলার সাহস কেউ করত না ।

আমি একমাত্র করতাম। তিনি সবসময় বলতেন শতায়ু পার করে যাব। কিন্তু শতায়ুর তিন বছর আগে থেমে গেল তার জীবন দীপ। আমার কাছে তার মৃত্যুকে “দেহত্যাগ “বলেই মনে হয়। একজন কর্তৃত্বময়ী মহিলা কে আমরা হারালাম। এত বয়সেও তিনি সবার ভালোবাসা আদায় করতে পেরেছিলেন।বাসন্তী কর আজ আর নেই কিন্তু তিনি আমাদের হৃদয়ে আছেন। তার আত্মার চিরশান্তি কামনা করছি। ওম শান্তি।


Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *