সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ২০১৯ : প্রায়শই উঠছে যে সমস্ত প্রশ্ন

3 - মিনিট |

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন। ক্ষোভে ফুঁসছেন সাধারণ মানুষ। কেউ বলছেন অসাংবিধানিক, কেউ বলছেন গণতন্ত্রের হত্যা। সমস্ত প্রশ্নের বিশদ ব্যাখ্যা করা হল-

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন। ক্ষোভে ফুঁসছেন সাধারণ মানুষ। কেউ বলছেন অসাংবিধানিক, কেউ বলছেন গণতন্ত্রের হত্যা। সমস্ত প্রশ্নের বিশদ ব্যাখ্যা করা হল-

প্রশ্ন ১ : পাকিস্তানের বালুচিস্তান, অহমদিয়া এবং মায়ানমারের রোহিঙ্গারাও এই আইনের সুবিধা কেন পাবে না?

উত্তর : নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫ অনুসারে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে কোনও দেশের নাগরিকরেই বাধা নেই।

প্রশ্ন ২ : এই আইন কীভাবে এই তিন দেশের (পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান) হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টানদের পক্ষে উপকারী?

উত্তর : এই তিন দেশ থেকে আসা এমন ধরনের সমস্ত বৈধ শরণার্থী যাদের কাছে প্রয়োজনীয় ভ্রমণ সংক্রান্ত নথি রয়েছে এবং যারা ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫-র অধীনে নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করে তারা ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই সুবিধা ওই সমস্ত দেশ থেকে আগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্যও প্রযোজ্য। অসমাপ্ত ভ্রমণ নথি অথবা মেয়াদ উত্তীর্ণ ভ্রমণের নথিপত্র রাখা এবং ধর্মের নামে হয়রানি শিকার, ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত ভারতে আশ্রয় নেওয়া এমন ধরনের সম্প্রদায়ের শরণার্থীরাই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন থেকে সুবিধা পেতে পারেন। এই ধরনের মানুষদের নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫-এর অধীনে অবৈধ শরণার্থী পরিভাষা থেকে বাইরে রাখা হয়েছে। ভারতে তাঁরা ৬ বছর থাকার পর নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য হবেন। অন্য বিদেশিদের জন্য, এই সময়কাল ১২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৩ : শরণার্থীদের দেখভাল করার জন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘের চুক্তির আওতায় ভারতের কি কোনও দায়িত্ব নেই?

উত্তর : হ্যাঁ, ভারতের অবশ্যই বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং ভারত তা থেকে পিছু হটছে না। ভারতের দু’লক্ষেরও বেশি শ্রীলঙ্কা তামিল ও তিব্বতী, ১৫ হাজারেরও বেশি আফগানি এবং ২০-২৫ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। একইভাবে, বিভিন্ন দেশ থেকে আসা হাজার অন্যান্য শরণার্থীরা বর্তমানে ভারতে বসবাস করছেন। আশা করা হচ্ছে, পরিস্থিতির যখন উন্নতি হবে তখন এই সমস্ত শরণার্থীরা কোনও না কোনও দিন নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবেন। ১৯৫১ সালে শরণার্থী বিষয়ক রাষ্ট্রসঙ্ঘের চুক্তি এবং ১৯৬৭ সালের রাষ্ট্রসঙ্ঘ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ নয় ভারত। তাছাড়া এই ধরনের অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য বাধ্য নয় ভারত। বিদেশিদের নাগরিকত্ব প্রদান করার ক্ষেত্রে ভারত-সহ প্রতিটি দেশের নিজস্ব নিয়ম রয়েছে।

প্রশ্ন ৪ : এই আইনের অধীনে এই তিনটি দেশের অবৈধ মুসিলম অভিবাসীদের কি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্বাসন দেওয়া হবে?

উত্তর : না। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-র অধীনে ভারত থেকে কোনও বিদেশিকে নির্বাসিত করার কোনও সম্পর্ক নেই। বিদেশি আইন ১৯৪৬ এবং পাসপোর্ট (ভারতে প্রবেশ) আইন, ১৯২০ অনুসারে যে কোনও বিদেশির নির্বাসন প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা হয়। তা সে যে কোনও ধর্মের অথবা দেশের হোক না কেন। শুধুমাত্র এই দু’টি আইনই ধর্ম অথবা দেশ নির্বিশেষে সমস্ত বিদেশিদের ভারতে প্রবেশ, স্থায়ীকরণ এবং ভারত থেকে তাঁদের বহিষষ্কারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

সুতরাং ভারতে স্থায়ী যে কোনও অবৈধ বিদেশির ক্ষেত্রে সাধারণ নির্বাসন প্রক্রিয়া প্রযোজ্য। এটা সম্পূর্ণ সুচিন্তিত বিচার প্রক্রিয়া, যা স্থানীয় পুলিশ অথবা প্রশাসনিক আধিকারিকদের দ্বারা কোনও অবৈধ বিদেশি শনাক্ত করার জন্য যথাযথ তদন্তের ভিত্তিতে তৈরি। এটা সুনিশ্চিত করা হয় যে এই ধরনের অবৈধ বিদেশিকে তার দেশের দূতাবাসের পক্ষ থেকে যথাযথ ভ্রমণের নথি জারি করা হয়। যাতে যখন তাকে নির্বাসিত করা হবে তখন যেন সে দেশের আধিকারিকরা তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকার না করে।

অসমে, নির্বাসন প্রক্রিয়া তখনই কার্যকর করা হয়, যখন বিদেশি আইন, ১৯৪৬-এর অধীনে একজন ‘বিদেশি’ হিসেবে এই ধরনের ব্যক্তি চিহ্নিত হয়। এরপরই সে নির্বাসন পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। যে কোনও অবৈধ বিদেশি ব্যক্তিকে শনাক্ত করা, আটক করা অথবা নির্বাসিত করার জন্য বিদেশি আইনের ৩ নম্বর ধারা এবং  পাসপোর্ট (ভারতে প্রবেশ) আইন, ১৯২০-র ৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, রাজ্য সরকার এবং জেলা স্তরের আধিকারিকদের কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ক্ষমতা দেওয়া হয়।

প্রশ্ন ৫: ভারতীয়রা (হিন্দু, মুসলমান বা অন্যরা) কি সিএএ দ্বারা প্রভাবিত হবে?

উত্তর: না। এতে করে ভারতীয় নাগরিকরা কোনওভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ হবেন না।

ভারতীয় সংবিধান অনুসারে ভারতীয় নাগরিকদের সম্পূর্ণ মৌলিক অধিকার বজায় থাকবে। সিএএ সহ কোনও আইনই এই অধিকারগুলি হরণ করতে পারবে না। এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সিএএ মুসলিম নাগরিকসহ কোনও ভারতীয় নাগরিককে প্রভাবিত করবে না।

প্রশ্ন ৬: শ্রীলঙ্কায় তামিলদের সম্পর্কে?

উত্তর: ১৯৬৪ এবং ১৯৭৪ সালে দুদেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে চুক্তি স্বাক্ষরের পরে, ভারতবর্ষে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৪.৬১ লক্ষ তামিলকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের অনুদানের ভিত্তিতে বর্তমানে তামিলনাড়ুতে ৯৫ হাজার শ্রীলঙ্কার তামিলভাষী বাস করছেন। তারা উপযুক্ত সময়ে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

প্রশ্ন ৭: কেবল তিন দেশ? সূচিতে থাকা ধর্মের কারণে উৎপীড়ন হওয়া বিষয়ে কি রয়েছে?

উত্তর : ভারতের তিন প্রতিবেশী দেশে ধর্মের কারণে নির্যাতিত হওয়া সংখ্যালঘুদের জন্য প্রযোজ্য সিএএ। এই তিন দেশে রাষ্ট্রের একটিই ধর্ম। অন্য ধর্মের প্রতি বিশ্বাসীদের উপর এই দেশগুলিকে নির্যাতন চালানো হয়। এই আইন পুরোপুরি সঠিক। বিশেষ পরিস্থিতিতে সমস্যার সমাধান করবে এই আইন। এই দেশগুলিতে থাকা ছয়টি সম্প্রদায়ের মানুষকে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।  

প্রশ্ন ৮: এই তিন দেশে থাকা মুসলমানরা কি কোনও দিনও নাগরিকত্ব পাবে না?

উত্তর : না। এই তিন দেশ তথা অন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির ভারতীয় নাগরিকত্ব জন্য সব সময়ে আবেদন করতে পারবে। সিএএ কোনও কোনও বিদেশি নাগরিককে ভারতের নাগরিকত্ব নেওয়া থেকে আটকাতে পারবে না। ভারতীয় আইনের অন্তগর্ত ধারাগুলি অনুযায়ী ওই ব্যক্তির যোগ্যতা থাকলে সেই নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারেন। বিগত ছয় বছরে প্রায় ২৮৩০ পাকিস্তানি নাগরিক, ৯১২ আফগান নাগরিক, বাংলাদেশের ১৭২ নাগরিকদের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে সেই সব দেশে সংখ্যাগুরু ছিল। ২০১৪ সালে ভারত ও বাংলাদেশ মধ্যে সীমান্ত সমঝোতা হওয়ার পর বাংলাদেশের ৫০-এর বেশি এলাকা ভারতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়ার পর প্রায় ১৪৮৬৪ নাগরিকদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অনেক সেই সকল দেশের সংখ্যাগুরুরা রয়েছে।

প্রশ্ন ৯: সিএএ কাদের উপর চালু হবে?

উত্তর : ৩১/১২/২০১৪ পর্যন্ত পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান থেকে ধর্মের কারণে নির্যাতিত হয়ে ভারতে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন, পার্সি, খ্রিষ্টানদের জন্য প্রযোজ্য সিএএ। এই তিন দেশ তথা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসলমানদের জন্য এই আইন প্রযোজ্য নয়।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news